জাতীয়

শৃঙ্খলা ফিরছেই না রাস্তায়

রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। সড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিংয়ের দৌরাত্ম্যে ঘটছে প্রাণহানি। কোন নিয়ম না মেনে বেপরোয়া তিন চাকার অটো। আবার জেলার সিএনজি চালিত অটোরিকশা ব্যাটারি চালিত রিকশাও চলে এসেছে রাজধানীতে। এসব বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের অভাবকে দুষছেন নগরবিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে নিয়ম ভাঙার চিত্র। রাজধানীর বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাড্ডা, রামপুরা, বাংলামোটর, মগবাজার, কাকরাইল, কুড়িল বিশ্বরোডসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে দেখা গেছে, অনেক যানবাহন সিগন্যাল অমান্য করে চলাচল করছে। প্রবেশমুখগুলো বন্ধ করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাবলিক বাস, ব্যাটারি চালিত রিকশা, রিকশা ছোট যানবাহনগুলো। প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পার্ক করে রাখা হয়েছে বাসট্রাকপ্রাইভেট কার। ছাড়া বিভিন্ন স্থানে চলছে খোঁড়াখুঁড়িও। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় যাত্রী ছাউনিসহ বাসস্টপ চিহ্নিত করা থাকলেও সে নিয়ম কেউ মানছে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে বাস চলাচল করছে ৪২ হাজার ৩৭৮টি। আর সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলছে ২০ হাজার ৮৯৩টি। বিশেষ করে এই দুটো পরিবহনকে ব্যবহার করে রাজধানীর মানুষ যাতায়ত করে। ছাড়া মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে কিছু মানুষ যাতায়াত করছে। তবে বাস সিএনজি চালিত অটোরিকশা রাজধানীর সড়কে কোনো নিয়মই কেউ মানছে না। অনিয়মের আরেক কারিগর সিএনজি চালিত অটো। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই ছোট বাহনটির বিরুদ্ধে। জানা যায়, রাজধানীতে বৈধ অটোরিকশার চেয়ে দ্বিগুণ অবৈধ অটো। ছাড়া রাজধানীতে চলছে ২৫ হাজার অবৈধ সিএনজি চালিত গাড়ি। এর মধ্যে ঢাকা জেলার সিএনজি থেকে হাজার, সাদা প্রাইভেট হাজার রাজধানীর আশপাশ জেলার ১২ হাজার সিএনজি অবৈধভাবে চলছে ঢাকায়। অবৈধ গাড়ি সড়কে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও কোনো কাজে আসছে না। পুলিশ মামলা দিলেও পরিবহনগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কে। বিশেষ করে মামলার কপি দিয়ে চলছে দিনের পর দিন। কোনো কাগজপত্র ছাড়াই গাড়িগুলো চলছে সড়কে।

বিষয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশার দাপট বেড়েই চলছে। শুধু রাজধানীতে অবৈধ অটোরিকশা চলছে ২৫ হাজারেরও বেশি। যেগুলো সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ। এই গাড়িগুলো কোনো নিয়মই মানে না। এর মধ্যে অনেকগুলো আছে মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি। বিশেষ করে সাদা প্রাইভেট অটোরিকশাগুলো। যেগুলোর মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এগুলো এখন চলন্ত বোমা। যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। ছাড়া রাজধানীর সড়কে দাপুটে চলছে ব্যাটারি চালিত রিকশা। এই তিন চাকার বাহনটি বেপরোয়া। অলি, গলির সঙ্গে প্রধান সড়কে তাদের একক দৌরাত্ম্যকোনো নিয়মই মানছেন না তারা। যানজটের অন্যতম দায় রয়েছে এই বাহনটির।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটা দাগে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলার পেছনে যে কারণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছেট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে আইন মানানোর ব্যবস্থা না থাকা, অবৈধ লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের দৌরাত্ম্য, ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, সড়কের খানাখন্দ, অবৈধ পার্কিং যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো এবং সেবা দাতা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব।

বিষয়ে বাংলাদশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ . আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, একই শহরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সড়কে সুশৃঙ্খল চিত্র, অন্য এলাকাগুলোতে ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই আমরা। এর প্রধান কারণ হচ্ছেঅর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় একটি মহল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে কাজগুলো করা উচিত, সেগুলো করছে না। অতীতে দেখা গেছে যখনই যে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তারাও এই কাজগুলো করেনি। কারণ তাদের নেতাকর্মীরাই সড়ক থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে লাভবান হয়েছে। যেহেতু ওই নেতারা প্রভাবশালী, তারা বিভিন্নভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলত। এজন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবার আগে প্রয়োজন। এরপর রাজউক সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। সড়কের যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে রোড প্ল্যানার ট্রান্সপোর্ট এক্সপার্টদের যুক্ত করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button