২০১৫ সালের ৫ ই জানুয়ারি আড্ডার ছলে জন্ম হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যার নামকরন করা হয় উদারতা পরবর্তীতে যেটি উদারতা যুব ফাউন্ডেশন নামে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় দায়িত্বশীল কিছু স্বেচ্ছাসেবকের। প্রতিষ্ঠানটির দপ্তর সম্পাদক সোহেল হোসেন জানান – উদারতা যুব ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক শিক্ষা, মানবকল্যাণে নিবেদিত সেবামূলক সরকার-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। নিবন্ধন নম্বর: যুউঅ/ সাত/নি নং- ৬৯। ২০১৫ সালে জুবায়ের আহম্মেদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করছেন। এই প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার সেবা, সমাজ-সংস্কার, মহোত্তম নীতিচেতনার সঞ্চার, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গঠনে নিরন্তর নানা কর্মসূচি পালন, সর্বোপরি একটি আদর্শ কল্যাণসমাজ বিনির্মাণে যথাশক্তি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি সব থেকে বেশি শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন । এর পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত এবং বাৎসরিক কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে যেমন – ইফতার কার্যক্রম, সবার জন্য কুরবানী,শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন, বৃক্ষরোপন কার্যক্রম, ক্রীড়া কার্যক্রম,বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রদান,বৃত্তি কার্যক্রম, খাদ্য সামগ্রী বিতরন, গৃহ নির্মান কার্যক্রম, সেলাই মেশিন বিতরন সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলতে থাকে ।
প্রতিবেদকঃ এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যায়ের নীতিমালা নিয়ে সমস্যা থাকে নানা বিতর্ক থাকে আপনারা বিতর্কমুক্তভাবে কিভাবে একদশক অতিক্রম করতে যাচ্ছেন?
উদারতা প্রতিনিধিঃ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রাসেল জানান , আমাদের অর্থ ব্যবস্থা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। আমাদের আয়ের প্রধানতম উৎস অনুদান মূলত সমাজের মানবিক মানুষদের অনুদানের টাকায় প্রতিষ্ঠানটি সুদীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। আমরা ব্যায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করে থাকি, কার্যক্রম এর অর্থ ব্যায় করার জন্য সব সময় নতুন নতুন টিম থাকে তাদের মনিটরের জন্য আবার তিন সদস্যের টিম থাকে কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরপরই কার্যক্রম পরিচালনাকারী টিম বিল ভাইচার সবই আমার দপ্তরে জমা করেন আমি দেখে শুনে ভেরিফাই করে সভাপতি , সাধারন সম্পাদকের অনুমোদনের জন্য প্রেরন করি তারা যাচাই বাছাই করে স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের দাঁতা সদস্যকে আমরা প্রেরণ করি।
প্রতিবেদকঃ আপনাদের ভিতরে কোন ঝগড়া বিবাদ বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দেয় কিনা?
উদারতা প্রতিনিধিঃ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি আবু তাহের তিনি জানান, ৩০-৩৫ জন ছেলে এক সাথে থাকি বিভিন্ন সময় মতের পার্থক্য হয়ে থাকে তবে সেটি আমরা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রন করে থাকি । আমি প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ দপ্তর দেখে থাকি। কারো কোন অভিযোগ থাকলে মিটিং এ জানানোর আগে আমাকে অবহিত করি আমি অভিযোগটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে বসি সমাধান করার চেষ্টা করি যদি কোন কারনে সমাধান না করতে পারি সর্বোচ্চ আমাদের মাসিক মিটিং পর্যন্ত সেখানেই সমাপ্তি ঘটানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি মহাইমিনুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, দারিদ্র্য বিমোচন, বহুমুখী শিক্ষায়ন প্রকল্প পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ, স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গঠনে নিরন্তর নানা কর্মসূচি পালন করছে। সাহিত্য,সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও পুরাতন সংস্কৃতির মাধ্যমে সমাজকে অতীত ও বর্তমান ধারা সম্পর্কের বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়ন করা।
মাদকের ভয়াবহ থাবা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী সংসদের সাধারন সম্পাদক রোকনুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয় । তিনি আমাদের জানান – আমাদের দুইটি বিষয়ে জিরো টলারেন্স রয়েছে একটি মাদক অন্যটি রাজনীতি। প্রতিষ্ঠানের কোন সদস্য রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ার ইচ্ছা পোষন করলে অব্যহতি নিয়ে যেতে হয় । অন্যদিকে আমাদের সদস্যপদ অর্জন করা তো রীতিমত যুদ্ধ করা চাইলেই যে কেউ সদস্য হতে পারে না । সদস্য হতে হলে আপনাকে প্রমান করতে হবে আপনি মাদক এবং ধূমপানমুক্ত। আমাদের অন্যতম একটি কার্যক্রম সমাজ থেকে মাদক পরিহার এবং মাদকাসক্তদের পূর্ণবাসন ও কর্মসংস্থানের তথা বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আয় বর্ধন মূলক কর্মে উদ্বুদ্ধকরণ।
প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অভিভাবক আলামিনের কাছে আমরা জানতে চাই গত ৯ বছরে আপনারা কি করতে পারেননি ? তিনি হেসে উত্তর দেন সমাজের জন্য অনেক দায়বদ্ধতা আমাদের আমরা তো তেমন কিছুই করতে পারি নাই । তবে আমাদের বড় একটি স্বপ্ন রয়েছে যুব প্রশিক্ষনের জন্য ’যুবভবন’ নির্মাণ । স্বেচ্ছাসেবী এবং যুবদের জন্য কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি ও যুব কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধির নিমিত্ত বহুতল যুবভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা।উদারতা যুব ফাউন্ডেশন পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক আবাসিক ও অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে একই ভেন্যুতে বাস্তবায়নের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে আবাসিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা। তবে আমাদের স্বপ্ন আঁকাশ ছোঁয়া সাধ্য সীমিত সমাজের বিত্তবান এবং মানবিক হৃদয়ের কেউ এগিয়ে আসলে সেটি স্বপ্ন নয় বাস্তবে ধরা দিবে।
এতগুলো স্বপ্নতৈরির পিছনের কারিগর প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান জুবায়ের আহম্মেদ শিমুলের কিছু প্রশ্ন করি
প্রতিবেদকঃ আপনাদের কোন বাঁধা আসেনা বা কেউ হিংসা করে না ?
উত্তরঃ মৃদু হেসে বলেন, বর্তমান সমাজ হলো, ব্যর্থ মানুষকে নিয়ে হাসা- হাসি আর সফল মানুষকে নিয়ে হিংসা করা। হিংসা তারাই করে যাদের কোনো যোগ্যতা থাকেনা। কেউ আপনাকে নিয়ে হিংসা করলে তাকে হিংসা করতে দেন। কারন আপনার গুন আছে বলে সে হিংসা করে। প্রতিযোগিতায় জিততে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ঈর্ষান্বিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। জনপ্রিয়তা থাকলে সমালোচনা হবেই। আর যোগ্যতা থাকলে মানুষ আপনাকে হিংসা করবেই। সবসময় আমাদের চেষ্টা করতে হবে আন্তরিকতার সাথে চিন্তা করার এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করার । হয়তো আমি ব্যক্তি হিসেবে আপনার পছন্দের নাও হতে পারি আমার কাজ আপনার ভালো নাই লাগতে পারে। দরকার আমার পাশে আসার? দূরে থাকেন না আমার থেকে জানেন ই তো আমার পথ আপনার পথ এক হবে না।
প্রতিবেদকঃ যে ছেলে মেয়েগুলো প্রতিষ্ঠানটির সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে তারা কি শিখছে? সমাজের কি উপকার করছে উদারতা ?
উত্তরঃ যেখানে চর্চা হয় শিক্ষার, যেখানে চর্চা হয় মেধার, যেখানে চর্চা হয় প্রযুক্তির, যেখানের ছেলেগুলো ব্যক্তিত্ব শেখে, তাদের সরাসরি কাজ করতে দেওয়া হয় অসহায়দের পাশে আমাদের সমাজের অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়ে রয়েছে বাবা মাকে খোঁজ নেয় না কি খাচ্ছে বা কনকনে শীতে বা তাদের কি হবে তার চিন্তা নেই। আমরা সেই সকল বাবা মায়ের পাশে সরাসরি কাজ করি যেন উপলব্ধি করতে পারি নিজের ভিতরের মনুষ্যত্বকে আমাদের বাবা মায়ের সাথে যেন বৃদ্ধ বয়সে খারাপ কিছু না হয়। কেউ দেখাতে পারবেন আমাদের কোন ছেলে বা মেয়ে গুরুজনদের সম্মান করে না? নৈতিকতার শিক্ষা তারা পেয়ে থাকে। বর্তমান সরকার কারিগরী শিক্ষার উপর প্রচুর জ্বোর দিচ্ছে, সব দায়িত্ব কি সরকার প্রধানের? কারিগরী শিক্ষায় আমরা অবদান রাখতে পারি না? কতটা রেখেছি? ভেবেছেন কোনদিন স্বপ্ন ছোঁয়া কতজনের কারিগরী প্রশিক্ষন দিয়ে জীবন পরিবর্তনে সহযোগিতা করেছে?
প্রতিবেদকঃ বড় উদ্দ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করতে ভয় পান না?
উত্তরঃ যে উদ্দ্যোগ নিতে পারে সে থামতে নয় প্রবল গতি আর প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের আশপাশে কয়েক প্রজন্মের নাগরিক এবং ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের কথা হয় । ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন মিন্টুর কাছে জানতে চাই , প্রতিষ্ঠানটি এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে কিনা তিনি উত্তর দেন প্রতিষ্ঠানটি এই উপকূলের আশার বাতিঘর , কত মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয় সমাজের কতগুলো ভালো কাজ তাদের হাত ধরে সংঘটিত হয় আপনাদের ধারনার বাইরে । আমরা তো সৌভাগ্যবান আমাদের এলাকার সন্তানদের হাত ধরে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে।
Facebook Notice for EU!
You need to login to view and post FB Comments!
One Comment