কলারোয়া

কলারোয়ার দেয়াড়ায় রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা

জাহিদুল ইসলাম( জাহিদ), কলারোয়া

কলারোয়া দেয়াড়া গ্রামে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতি যাব। ঠোঙ আইনে দে দড়া আইনে দে, বালিধারা খান কই? ঠিলের গলায় কানাচ নাগা বেলা গেল ওই। কন্ঠশিল্পী অনিল হাজারিকার জনপ্রিয় এ আঞ্চলিক গানের কথার বাস্তবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গাছিদের মাঝে। সেই সাথে শীতের আগমনী বার্তার সাথে বেড়েছে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা দেয়াড়াগ্রামের খেজুর গাছের কদর।

এক সময় দিগন্তজুড়ে মাঠ কিংবা সড়কের দু’পাশে সারি সারি দেখা যেত অসংখ্য খেজুর গাছ। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গ্রামবাংলার খেজুর গাছের ঐতিহ্য। সচারচার এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না লম্বা ঝিরিঝিরি পাতার খেজুর গাছ।

বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। তেমনি এক ঋতু হেমন্ত। এই ঋতুতেই দেখা মিলে শীতের। এই শীতের সময়ই পাওয়া যায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস খাওয়ার যেন মজাই আলাদা। তাই শীত মৌসুমের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দেয়াড়া গ্রামের গাছিরা।

এখনো তেমন একটা শীতের দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। খেজুর গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছে অনেক গাছি।

কয়েক বছর আগেও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। খেজুর গাছ সচারাচর উপযোগী আবহাওয়ায় জন্ম হয়। এমনকি অনেক স্থানে একাধিক গাছ জন্ম নেয়ায় সৃষ্টি হয় দেশি খেজুর গাছের বাগান। এসব গাছ বাড়ির আঙ্গিনা, জমির আইল ও পতিত ভূমিতে জন্ম নেয় বেশি।

খেজুর গাছ সারা বছর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীত মৌসুমে তার কদর বেড়ে যায় অনেকাংশে। কারণ প্রতি বছরে ৩/৪ মাস খেজুর গাছ থেকে গুড় ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাধু ও মানবদেহের উপকারিতার কারণে মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে থাকে।

এক সময় শীতকালে শহর থেকে মানুষ ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা, ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন তারা। যার সাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ ২০/৩০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস,গুড়,পিঠা,পুলি ও পায়েশ খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এ বিষয গাছি গোলাম মোস্তফা ও তবিবার বলেন আমরা এখান থেকে ১০/১৫ বছর আগে একশত থেকে দুই শতকাছ তুলতাম কিন্তুু এখন আর তেমন গাছ না থাকায় এ বছর চাহিদা অনুযায়ী রস ও গুড়ে চাহিদা মেটানো যাবে না। তারা আরো বলেন আমাদের আগামী প্রজন্মদের রস ও গুড় খাওয়াতে হলে খেজুর গাছ লাগানো কোন বিকল্প নেই। কৃষকের সাথে সরকারকে খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এবং সরকারকে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য আর্থিকভাবে কৃষককে সহযোগিতা করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button