আশাশুনি

আশাশুনি এআরডিও’র বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য অর্থ আত্মসাত ও দুর্ব্যবহারের প্রতিকার দাবী

জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি

সাতক্ষীরার আশাশুনির সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (অতিঃ দায়িত্ব আরডিও) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩ লক্ষাধিক টাকার ঘুষ বাণিজ্য, সদস্য ভর্তিতে অনিয়ম, ঋণদানে দুর্নীতি, ভূয়া ঋণ ইস্যু করে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়ম বহির্ভুত ভাবে সিলিং বাড়িয়ে ঋণ প্রদান, বয়সসীমা লংঘন করে ঋণ প্রদান, নতুন সমিতি/দল ও সদস্য ভর্তিতে অনিয়ম, ভূয়া নিবন্ধন দেখিয়ে সমিতির নামে ব্যাংকে ঋণের চাহিদা দাখিল, স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণের সিলিং বাড়িয়ে ঋণ প্রদান, সমিতিতে গোপনে ব্যক্তিগত টাকা বিনিয়োগ, ম্যানেজারদের কমিশন দিতে নাজেহাল ও ঘুষ গ্রহন, ঋণ বিতরণে অবিলিকৃত টাকা ব্যাংকে জমা না দেওয়া এবং কর্মচারীদের থেকে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে অপসারন করে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন ও সকল প্রকল্প/কর্মসূচির কর্মচারীদের মানসিক নির্যাতনের প্রতিকারের দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহা পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের অনুলিপি ১৬টি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
বিআরডিবি আশাশুনি উপজেলা দপ্তরের হিসাব সহকারী, ৩ জন পরিদর্শক, অফিস সহকারী, গ্রাম সংগঠক, মাঠ সহকারী, নৈশ প্রহরী ও এমএলএসএসবৃন্দ স্বাক্ষরি আবেদন পত্রসূত্রে জানাগেছে, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান একজন আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অফিসের কর্মচারীদের সাথে অনৈতিক ও অশোভন আচরন করে এসেছেন। তার দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে কর্মচারীরা স্বাবাভিক থাকতে পারছেনা। তিনি নিজেকে আইনজীবি হিসাবে পরিচয় দিয়ে আওয়ামী দাপট বজায় রেখেছেন, এমনকি ৫ আগষ্টের পরে বর্তমান সরকার সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ, শেখ হাসিনা অচিরেই দেশে ফিরবেন, যারা লাফালাফি করছেন তারা মজা টের পাবে বলে আস্ফালন করে থাকেন। তার হাতে সকল কর্মচারী, সমবায়ী ও প্রতিষ্ঠান জিম্মী হয়ে পড়েছে। তার হাত থেকে সাবেক পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু বিল্লাল হোসেনও রক্ষা পাননি; তিনি ও তার চাচাতো ভাই (সরকারি চাকুরীজীবি) পরিকল্পিত ভাবে তাকে আশাশুনি ছাড়তে বাধ্য করান বলে অভিযোগ রয়েছে।
এআরডিও (বর্তমানে অঃদাঃ আরডিও) মোস্তাফিজুর রহমান আশাশুনিতে যোগদানের পর থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছেন। কোন সমিতি/দল ঋণ ফাইল দাখিল করলে ৩-৪ হাজার টাকা ঘুষ না পেলে ঋণ ছাড়েন না। নতুন সদস্য ভর্তির বয়স ৩ মাস না হলে ঋণ দেয়া হয়না, কিন্তু তিনি সবদলপুর কেএসএস এর সদস্য মাধবী সরকারকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে সদস্য ভর্তি দেখিয়ে সভ্য রেজিস্টারে স্বাক্ষর না করিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণ ইস্যু করেন। কিন্তু আরও অবাক কান্ড হলো মাধবী রানীকে টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। খেলাপী সদস্যকেও সিলিং বাড়িয়ে ঋণ দেওয়া, একক ও পল্লী উদ্যোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য, ৬০-৭০ বছর বয়সী ঋণ পরিশোধকারীকেও ঘুষের বিনিময়ে ঋণ প্রদান, নতুন সমিতি/দলের ক্ষেত্রে ৮/১০ হাজার টাকা ও সদস্য প্রতি ১০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহন, নিবন্ধন প্রাপ্তির আগেই তিনি এপিএলপি দাখিল করে নতুন ৫টি সমিতির নামে ভূয়া নিবন্ধন দেখিয়ে ঋণের চাহিদা সোনালী ব্যাংকে দাখিল করেছেন। তিনি স্ত্রীর নামের টাকা পরিশোধ দেখিয়ে স্বামীর নামে দ্বিগুণ টাকা বাড়িয়ে এক লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছেন। আবার নিয়ম বহির্ভূত ভাবে স্বামী-স্ত্রীকে সিলিং বাড়িয়ে ঋণ দিয়েছেন। তাছাড়া যে সকল সমিতি/দলের ম্যানেজারের সাথে গোপন চুক্তি হয়ে যায় তাদেরকে নিজের টাকা বিনিয়োগ করে ঋণ দিয়ে থাকেন। ম্যানেজারদের কমিশন দিতে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে থাকেন। ম্যানেজার প্রতি ১২০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ পেলে কমিশনের চেক ছেড়ে থাকেন। ঋণ বিতরণকালে কোন সদস্য অনুপস্থিত থাকলে অবিলিকৃত টাকা তিনি নিজেই রেখে দেন। ফান্ডে রাখতে টাকা চাইতে গেলে তিনি রেগে যান, কর্মচারীদের নানা ভাবে চেপে ধরেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকেন। উপরোক্ত অনিয়মগুলোর বাস্তব উদাহরণ হিসাবে সবদলপুর কেএসএস, কাকড়াবুনিয়া নতুন সদাবিক দল, ইউসিসিএ লিঃ এর নতুন ৫টি সমিতি, আশাশুনি পূর্বপাড়া কেএসএস, নাছিমাবাদ কেএসএস, কামালকাটি কেএসএস, খেজুরডাঙ্গা কেএসএস, গোয়ালডাঙ্গা কেএসএস, রাউতাড়া পশ্চিম পাড়া কেএসএস এর নাম আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে খেজুরডাঙ্গা কেএসএস এর সদস্য জয়ন্ত এর নামে উত্তোলনকৃত অবিলিকৃত ৫০ হাজার টাকা আজও অভিযুক্ত কর্মকর্তা ব্যাংকে জমা করেননি বলে দাবী করা হয়েছে।
এছাড়া কর্মচারী বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ২২০০০ টাকা, কমলেশ মন্ডলের থেকে ৩৩ হাজার টাকা, সবুজ কুমার রায়ের থেকে ৭৮ হাজার টাকা, হেমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের থেকে ৮৮ হাজার ৬০০ টাকা, পিন্টু কুমার দাশের থেকে ২০ হাজার টাকা, অলোক কুমার মন্ডলের থেকে ১৫ হাজার ১০০ টাকা, রানু চক্রবর্তীর থেকে ২৫ হাজার টাকা, রেজাউল ইসলামের থেকে ১৫ হাজার, হাবিবুর রহমানের থেকে ২৩ হাজার ১০০ টাকা, নুরুন্নাহারের থেকে ৩ হাজার টাকা ও সোলাইমান হোসেনের কাছ থেকে ৪০০০ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান।
এব্যাপারে যথাযথ তদন্তপূর্বক দুর্নীতিবাজ, ঘুষকোর, অনৈতিক ও অশোভন আচরনে মানসিক নির্যাতনকারী, সমবায়ী ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারী এবং সর্বোপরী রাজনীতির লেবাসে প্রতিবাদের পথ রুদ্ধ করে দমন পীড়ন ও অপকর্মকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে কর্মচারীদের রক্ষার জোর দাবী জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সহকারি পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোন সত্যতা নেই। আমি মাত্র আড়াই মাস মত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেয়েছি। এর ভেতরে আমি এত দুর্নীতি কিভাবে করব? কিছু দুষ্কৃতিকারী ব্যক্তি আমাকে এই পথ থেকে সরানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button