বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মুখ থুবড়ে পড়লে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব হবে। তাই আমরা আশা করব, এ সরকার যে কমিশন করেছেন তার রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী করণীয়, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত ’৯০–এর ছাত্র–গণঅভ্যুত্থানের রূপকার সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন– আমরা এই সরকারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করি এবং করব একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। আর এই নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব হতে হবে।
আমানউল্লাহ আমান বলেন, এই নির্বাচনে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যাদের রায় দেবে তাদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে এবং দেশ শান্তিপূর্ণভাবে চলবে। পাশাপাশি দেশের যেসব সমস্যার জট বেঁধে আছে তা সমাধান করবে। একই সঙ্গে ছাত্র–জনতা এবং দেশের মানুষের দাবি তা পূরণ হতে হবে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সাগর–রুনির বিচার এখনো হয়নি জানিয়ে আমানউল্লাহ আমান বলেন, অবিলম্বে সাগর–রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে এবং এই বিচার দ্রুত করতে হবে। এত দিন সাগর–রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্ব হওয়ার কারণ একটাই; আওয়ামী লীগ সরকার এখানে জড়িত ছিল। তখন প্রতিবেদন জমা হয়নি, বিলম্ব হয়েছে কিন্তু আজ এই বিচার বিলম্ব হওয়ার কথা নয়।
আমানউল্লাহ আমান বলেন, দীর্ঘ অনেক বছর আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। গণতন্ত্র একবার এনেছেন জিয়াউর রহমান, আরেকবার এনেছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ১৬ বছর দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন করে সর্বশেষ ছাত্রজনতার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি গণতন্ত্র।
সাইফুদ্দিন মনিকে স্মরণ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সাইফুদ্দিন মনির স্বপ্ন তখনই পূরণ হবে, যখন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় আমরা দ্রুত গণতন্ত্র ফিরে পাব, দ্রুত ভোটাধিকার ফিরে পাব এবং দ্রুত একটি জনগণের সরকার পাব। যেখানে এই দেশের সরকার পরিচালিত হবে জনগণের মাধ্যমে।
সভায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশে দুঃশাসন চালিয়েছে, সেটা আর বলতে চাই না। তারা দেশটাকে জেল বানিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রাস্তায় মিশিয়ে ফেলছে। শেখ হাসিনা মনে করেন–দেশটা তার বাবার সম্পত্তি; যেটা মনে করতেন তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানও। শেখ হাসিনা শুধু এবারই পালায়নি, এর আগে ৭৫–এ তিনি বোরকা পরে পালিয়েছেন। কিন্তু আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া পালায়নি। ওয়ান–ইলেভেনের সময় আমাদের নেত্রীকে তার দুই ছেলেকে নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া পালিয়ে যাননি। গত ১৬ বছর বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল–জুলুম–হত্যার শিকার হয়েছেন। জামায়াতও অনেক ত্যাগ শিকার করেছে, হেফাজত ইসলামীও অবদান রেখেছে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, অবিলম্বে বিএনপির সব নেতাকর্মীর নামে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সব রাজবন্দিকে মুক্ত করে দিতে হবে।
আলোচনা সভার শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সাইফুদ্দিন মনির জন্য দোয়া করা হয়।
সভায় বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবীব, দলটির জলবায়ু বিষয়ক সহ–সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ডাকসুর সাবেক জিএস নাজিমুদ্দিন আলম, জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।