সাতক্ষীরা

ভিন্ন কৌশলে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্র

নিজস্ব প্রতিনিধি

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে অনেক সরকারী অফিসের কার্যক্রম। ভোগান্তিও কমেছে সরকারি সেবাদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠানে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সাতক্ষীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে থেমে নেই দালালদের কার্যক্রম। কাজের ধরন বদলেছে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুশৃঙ্খল লাইন অল্প সময়ের মধ্যে জমা থেকে শুরু করে বায়োমেট্রিকসহ সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে । ব্যস্ত সময় পার করছে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
এসবের মধ্যেই চলছে দালালদের কার্যক্রম। দূরদূরান্ত থেকে আসা আবেদনকারীরা অফিসের আশপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে আবেদন ফরম পূরণ করতে গেলে বিভিন্ন অজুহাত দিচ্ছে তারা কৌশলে পাসপোর্ট অফিস ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা। এসব কর্মকান্ডে বিব্রত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সেবা গ্রহীতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দালালদের সখ্যতা থাকার একটা সময় পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তির যেন শেষ ছিল না। স্বাভাবিক নিয়মে পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতো সেবাপ্রত্যাশীরা। পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দিলে নানা ধরনের অসঙ্গতি দেখিয়ে ফাইল বাতিলসহ বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। যার ফলে ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে দালাল সিন্ডিকেটের শরণাপন্ন হতেন তারা। সেখান থেকেই যেন রীতি হয়ে আছে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট হয় না। তবে পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান।
পাসপোর্ট অফিস ও আশপাশের বিভিন্ন দালাল এবং পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে দালালদের কাছ থেকে পাসপোর্ট তৈরির একটি মূল্য তালিকা থেকে জানা যায়। দালালের মাধ্যমে ১০ বছরমেয়াদি পাসপোর্ট করতে গুনতে হবে লোক বিশেষ ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। আবার ১০ বছর মেয়াদে জরুরি পাসপোর্ট করতে দালালকে দিতে হবে ১১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যেখানে ১০ বছরের পাসপোর্ট করতে সরকারি ব্যাংক ড্রাফট ফিস নির্ধারণ করা ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি পাসপোর্টের সরকারি ফিস ৮ হাজার ৫০ টাকা। আবার দালালের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট করতে দিতে হবে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা, যেখানে সরকারি ফিস ৪ হাজার ২৫ টাকা। পাঁচ বছরের জরুরি পাসপোর্ট করতে দালালকে দিতে হবে ৯ হাজার টাকা, যেখানে সরকারি ব্যাংক ড্রাফট নির্ধারণ করা ৬ হাজার ৩৫০ টাকা।
স্থানীযয় এক দোকান মালিক বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসের পাশেই গড়ে উঠেছে ১০টির মতো দোকান। এই দোকান থেকে পাসপোর্ট ফরম পূরণের পরে গ্রাহককে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে শোনা যায়।
তিনি বলেন, জেলা শহর ও আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন এসব দোকানগুলো থেকেই পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে হয়। অফিসে গিয়ে শুধু ফিঙ্গার এবং ছবি তোলা হয়। এ জন্য এসব দোকান থেকেই মানুষ নিজের অজান্তেই হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।
পাসপোর্ট করতে আসা সুব্রত কুমার দাশ বলেন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন দোকান থেকে আমি পাসপোর্টের আবেদন করেছি। তিনি আমাকে বলেন, ৯ হাজার টাকা দিলে আমি সময় মতো পাসপোর্ট পেয়ে যাব। পরবর্তীতে কথাবার্তা বলে আমার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে এসে জানতে পেরেছি পাসপোর্ট বাবদ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মোঃ আজমল কবির বলেন, সম্প্রতি আমি সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকেই কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এসবের মধ্যেও দালালরা বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা পাসপোর্ট করতে আসা বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, দালালরা পাসপোর্ট অফিস ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর চিঠি দিয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button