সদর

সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোমরা ইউনিয়নে চাঁদাবাজি ও অসহায় গরীব মানুষের ক্রাশ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের বৈচানা গ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বৈচানা গ্রামে ভুক্তভোগী আবু সাইদ এর পরিবারের আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠানে বৈচানা এলাকার আবু সাইদ, বাসন্ত রানী, শষান্ত রানী, গঙ্গা রানী, নমিতা রানী, আলোমতী, শাহানারা খাতুন, সাবিনা খাতুন, রবিউল ইসলাম, ডাঃ সুমন, উত্তম দাস, দিলীপ দাস, ফারুক হোসেন, জুলফিকার, তরিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলামসহ গ্রামের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলামকে জুতা ও ঝটিকা মেরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে
মানববন্ধনে উপস্থিত ভুক্তভোগী আবু সাঈদসহ অন্যন্যারা বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগি জাকির হোসেন, আব্দুল আজিজ, সামছুর ইসলাম, আলী আশরাফ, রফিকুল, সামাদ ও সাকিবসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র এলাকায় চাঁদাবাজি ও জবরদখলে মেতে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দয়ালের ওয়ারেশ বুলী দাসীর ছেলে প্রদীপ দাস, জামাতা রামপ্রসাদ দাস, শংকর দাস, দেবদাস দাস, মেয়ে কল্পনাকে সাথে নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে তাদের তিন শতক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে তিনটি ঘর বানাতে থাকে। কেটে ফেলে সাতটি মেহগনি ও চারটি জিওলি গাছ। ঘেরা দিয়ে জমি দখল করতে বাধা দেওয়ার ভাই তরিকুলের স্ত্রী তাহমিনা ও মেয়ে ১০ম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী শারমিন সুলতানাকে মারপিট করে। খবর পেয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানর সামছুর রহমান ও বর্তমান চেয়াম্যান ইসরাইল গাজী গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করতে বললে তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হয়।
বক্তারা আরো বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ধামা চাপা দিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলাম প্রতিপক্ষ হয়ে ইসরাইল চেয়ারম্যানকে সম্মানহানি ও হয়রানি করতে বুলি দাসী ও তার সন্তানদের ব্যবহার করে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানবন্ধন করা করেছে। সাইফুল ইসলাম স্বার্থহাসীল করার জন্য তাদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ও মানববন্ধনে মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে ইসরাইল গাজীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
বক্তারা আরো বলেন, ওই জমি আবু সাইদদের দখলে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলাম তাদের কাছে ৭০ হাজার চাঁদা দাবি করেন। কিন্ত সাইফুল ইসলামের চাঁদার টাকা না দেওয়ায় বৈচানা গ্রামের মৃত নুরুল আমিনের ছেলে আবু সাঈদের দীর্ঘদিনের কেনা ও দখলীয় জমি থেকে কয়েকটি মেহগণি গাছ ও কয়েকটি জিওলি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে কয়েকদিন আগে। এর পাশে জোরপূর্বক ঘরও বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য: বৈচানা ঋষিপাড়ার সুনীল দাসের ছেলে কমল দাস, হরিপদ দাসসহ কয়েকজন জানান বৈচানা গ্রামের জলধর ঋষি একমাত্র পুত্র সন্তান বাবুরাম দাসকে রেখে মারা যান। বাবুরাম দাসের পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী কিনু দাসী ওয়ারেশ থাকেন। বাবুরাম দাসের পৈতৃক ৩১নং বৈচানা মৌজার এসএ ১৪২ নং খতিয়ানের ২২৪ দাগের আট শতক জমির মধ্যে তিন শতক জমি প্রয়াত কোরবান আলী গাজীর ছেলে নুরুল আমিনকে ১৯৯৩ সালের ২০ মে ২৩২৬২/৯৩ নং রেজিস্ট্রি কোবালা মূলে নাবালক স্বপন কুমার দাস, অমল কুমার দাস ও দুখে দাসের অভিভাবক হিসেবে বাবুরাম দাসের স্ত্রী কিনু দাসী রেজিস্ট্রি কোবালা দলিল মূলে লিখে দেন। নুরুল আমিনের মৃত্যুর পর ওই জমির মালিক হন তার ছেলে আবু সাঈদ, স্ত্রীসহ ১৬জন ছেলে মেয়ে। পরবর্তীতে ওই জমি ভূলবশতঃ ১/১ খতিয়ানে যায়। বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম এক সময়কার ভারতীয় নাগরিক দয়াল ঋষি বৈচানা গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে থাকার সুবাদে তাকে ও বাবরাম দাসের সাথে দ্বৈত ওয়ারেশ উল্লেখ করে চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করে দু’জনকে ওয়ারেশ বানিয়ে এ জমি নিয়ে নতুন করে বিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে।
নুরুল আমিনের ছেলে আবু সাঈদ জানান, তাদের জমি ১/১ খতিয়ানে ‘খ’ তপশীল ভুক্ত হওয়ায় তিনি ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে যেয়ে তিনি জানতে পারেন যে তাদের তিন শতক জমিসহ আট শতক জমি ২০১৮সালের ১৯ নভেম্বর গোবিন্দ দাসের স্ত্রী বুলু দাসীর নামে নামপত্তন করা হয়েছে। বুলু দাসী নিজেকে জলধর ঋষির ওয়ারেশ সেজে সহকারি কমিশনারকে ভুল বুঝিয়ে এ নামপত্তন করিয়েছে। ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্যের সুপারিশকৃত বাবুরাম দাসকে একমাত্র ওয়ারেশ হিসেবে ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইজরাইল গাজী ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ও ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম সুপারিশকৃত ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী বাবুরাম দাস ও দয়াল দাসকে ওয়ারেশ উল্লেখ করে পৃথক আরও একটি ওয়ারেশকাম সনদ দিয়েছেন। সমস্যার সামধানে ২০২২সালের পহেলা নভেম্বর তিনি সদর সহকারি কমিশন (ভূমি) এর কাছে ১৫০ধারায় বুলু দাসীর নামপত্তন বাতিলের জন্য মামলা করেন। সদর সহকারি ভূমি কমিশনার সুমনা আইরিন দুই বার দু’পক্ষের শুনানী শেষে দুটি ওয়ারেশকামের মধ্যে কোনটি সঠিত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ১৩জুন ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীকে নির্দেশ দেন। গত পহেলা অক্টোবর ইসরাইল গাজী সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের ৭০৪/২২নং ওয়ারেশকামটি অর্থাৎ বাবুরাম দাস একমাত্র ওয়ারেশ বলে গত পহেলা অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলামকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বিএনপির কেন্দ্রীয় ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটিসহ প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান মানববন্ধনের উপস্থিত গ্রামের সাধারণ মানুষ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button