আর্ন্তজা‌তিক

হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ট্রাম্প, করতে চান যে ৭ কাজ

হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার চার বছর পর ফের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে পুরো বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু এখন একজনই- তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে একে সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন বলছেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) কোটি কোটি আমেরিকানের ভোটে ফের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প।

জয়ের আগে প্রচারের সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ছিল অর্থনীতি, অভিবাসন ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। এতে নিজের লক্ষ্য পূরণ আরও সহজ হবে তাঁর জন্য। চলুন দেখে নেওয়া যাক নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে সাতটি কাজ ট্রাম্প করতে চান, সেগুলো কী-

অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়া

নির্বাচনী প্রচারের সময় একটা কথা ট্রাম্প বারবার বলেছেন। সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করবেন তিনি। এ ছাড়া মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। নিজের প্রথম মেয়াদে এই প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে কিছুটা বাঁকা চোখে দেখছেন বিশেষজ্ঞারা। বিবিসিকে তাঁরা বলেছেন, যে পরিমাণ অভিবাসীকে ট্রাম্প ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশাল আইনগত ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এ ছাড়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিও কমিয়ে দিতে পারে। ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রে নিজেকে ইসরায়েলের একজন কড়া সমর্থক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

অর্থনীতিতে মনোযোগ

নির্বাচনের পরপরই বুথফেরত জরিপে দেখা গিয়েছিল, ভোটারদের কাছে অন্যতম বড় একটি বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতি থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে নিত্যপণ্যের দাম রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় উঠেছিল। এছাড়া কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিদেশি পণ্যের ওপর নতুন অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে চান অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।

জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পরিবেশ সুরক্ষা-সংক্রান্ত নানা আইন বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। তখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারও জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সহায়তা করা। ইলেকট্রিক গাড়ির বিরোধী তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসে বসার ‘দুই সেকেন্ডের মধ্যে’ জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করবেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বরাবরই এর কড়া সমালোচনা করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন- ক্ষমতায় এলে সমঝোতার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ করবেন। তবে ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রে নিজেকে ইসরায়েলের একজন কড়া সমর্থক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারকে এই যুদ্ধ থামানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। লেবাননেও যুদ্ধ থামানোর পক্ষে ট্রাম্প।

গর্ভপাতের অধিকার রদ

নিজের কিছু সমর্থকের ইচ্ছার কথা মাথায় রেখে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে গর্ভপাতের অধিকার রদ সংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করবেন না। ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে খারিজ করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পক্ষে ছিলেন আদালতের রক্ষণশীল বিচারপতিদের অধিকাংশ।

৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা

২০২০ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে সে পরাজয় তিনি মেনে নেননি। নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধাতে সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ট্রাম্প বলেছিলেন, দাঙ্গা অভিযোগে তুলে তাঁর শত শত সমর্থককে রাজনৈতিক বন্দী করা হয়েছে। তাঁদের অনেককে অকারণে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে তাঁদের কয়েকজনকে ‘মুক্তি’ দেবেন তিনি।

বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া এবং সরকারি গোপন নথি সরানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই মামলা দুটি করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসে বসার ‘দুই সেকেন্ডের মধ্যে’ জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় ফিরেছেন ট্রাম্প। তা-ও আবার ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ঘাড়ে নিয়ে। এখন দেখার বিষয় তিনি কী করেন।

সূত্র- বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button