“রক্ত দিলে হয়না ক্ষতি, জাগ্রত হয় মানবিক অনুভূতি” এই প্রতিপাদ্যকে মনে ধারণ করে ৩৩ বছর বয়সী আব্দুল হামিদ শেখ নামের এক যুবক কিডনি সমস্যায় ভুগছেন মাছুরা বেগম নামের এক রুগীকে ২২শে মার্চ শনিবার রক্ত দেওয়ার মধ্যদিয়ে ৫০তম রক্তদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আব্দুল হামিদ শেখ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ঝাউডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সালাম এর ছেলে। তিনি ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আগামীর স্বপ্ন এর সাতক্ষীরা জেলার দপ্তর সম্পাদক, মাদক নির্মুল যুব কমিটির সদর উপজেলার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাল্য বিবাহ ইভটিজিং প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ রোগীদের রক্ত দিয়ে সহযোগীতা করে চলেছেন আব্দুল হামিদ শেখ। পাশাপাশি তার একার পক্ষে রক্তদানে সম্ভব না হওয়ায় তিনি কয়েকজন তরুন-যুবককে নিয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের এক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রথম অবস্থায় রক্ত দিতে অনেকে ভয় পেতেন। কিন্তু রক্তদাতা সংগঠণের অনুপ্রেরণায় এখন অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসছেন। এমনকি অনেক নারীরাও স্বেচ্ছায় রক্তদান করছেন। এতে করে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হামিদ শেখ এর প্রচেষ্টায় বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। কোন রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই নিজ উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন সংগঠনের সদস্যগণ। পাশাপাশি অসহায় মানুষদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বৃক্ষ বিতরণ সহ নানান সামাজিক কাজের মধ্যেদিয়ে সুনাম অর্জন করছেন আব্দুল হামিদ শেখের হাতে গড়া এ সংগঠনটি। সেচ্ছাসেবক হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত ও বিশেষ সম্মাননা স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের মাছুরা বেগম নামের এ কিডনী রোগী বলেন, আমার কয়েকমাস পর পর রক্ত দিতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় আত্মীয় স্বজনরা রক্ত দিতেন। পরে যখন রক্ত সংকটে ভুগতাম তখন জেলা শহর হতে রক্ত কিনতে হত। আমরা গরীব মানুষ। এত টাকা দিয়ে রক্ত কেনা সম্ভব ছিলোনা। পরে ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের রক্তদাতা সংগঠনের আব্দুল হামিদের সাথে যোগাযোগ হয়। এখনো পর্যন্ত তারা আমাকে বিনা পয়সায় রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এছাড়াও কাঁদোস্বরে রক্তদাতা সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
আব্দুল হামিদ শেখ বলেন, বয়স যখন ১৭ বছর তখন থেকেই নিজ এলাকায় মানুষের সেবায় রক্তদান সহ সামাজিক কাজে লিপ্ত হই। মানবতার সেবায় কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। আগে আমাদের এলাকায় অনেক রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হলে নানা রকম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হতো। যাতে করে রোগীদের রক্ত ব্যবস্থা করা যায় এজন্য বিনামূল্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান করার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তুলি ‘ঝাউডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের মাধ্যমে এলাকায় বর্তমানে অনেক রক্তদাতাগন নির্ভয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেন। ইতিমধ্যে আমি নিজেই ৫০ব্যাগ রক্তদান করে অনেক আনন্দিত।
পাথরঘাটা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাজাহারুল ইসলাম শিবলু বলেন, রক্তদানে ঝাউডাঙ্গার যুবক আব্দুল হামিদ শেখ এর অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের এলাকায় আব্দুল হামিদের সেবা, সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এমন পরিবার খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই মানবিকতার কাজের দৃষ্টিতে আব্দুল হামিদ শেখ দৃষ্টান্ত বলা যায়।
ঢাকাস্থ সাতক্ষীরা জেলা সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানান, আব্দুল হামিদের সামাজিক ও মানবিক কাজকে মানুষের অনুপ্রেরণা জোগায়। বিশেষ করে সে এলাকার দরিদ্র অসহায় মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থ ভাবে ছুটে চলে। রক্তদানের পাশাপাশি বিশেষ কিছু সময়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষ রোপণ ও বৃক্ষ বিতরণ সহ অন্যান্য সামাজিকমূলক কাজ করতে দেখা যায়। এসবের মূলে আব্দুল হামিদ শেখের অবদান, অক্লান্ত পরিশ্রম, দিকনির্দেশনা, অনুপ্রেরণা এবং সকলের সহযোগিতায় সে সামনে পথ চলার সাহস পেয়েছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।